ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীসহ এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ৬, ২০২২, ১২:২৪ এএম

ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীসহ এখন পর্যন্ত  ৪৯ জন নিহত

চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে লাগা আগুনে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া  ফায়ার সার্ভিসের ৯কর্মীসহ এখন পর্যন্ত ৪৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করছে। 

রবিবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনউদ্দিন নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে বাকিদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এই দুর্ঘটনায় দগ্ধ-আহত হয়েছে প্রায় চার শতাধিক। আহত পুলিশ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিএমএইচ এবং স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রবিবার বিকেল ৪টার দিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, “কন্টেইনারগুলো কেমিক্যালে পূর্ণ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লাগছে। আর এ কারণেই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে কন্টেইনার ডিপোটিতে আগুন লাগে। ডিপোটিতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কন্টেইনার ছিল। রাত বাড়ার সাথে সাথে এ আগুনের ঘটনার ভয়াবহতা বাড়ে। তবে এখন আগুনের মাত্রা কমে আসলেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের জানান, এতবড় অগ্নিকাণ্ড হলেও মালিকপক্ষের কারো উপস্থিতি ঘটনাস্থলে তারা লক্ষ করছেন না। তাদের সাথে যোগাযোগ না থাকা একপ্রকার জটিলতা তৈরি করছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, এ ঘটনার কারণে চট্টগ্রামের সকল চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর সকল চিকিৎসককে হাসপাতালে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালেও দগ্ধদের চিকিৎসা সেবা দিতে বলেছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে প্রথমে একটি কনটেইনারে আগুনের সুত্রপাত হয়। পরে আরও কয়েকটি কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রথমে কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এরপর আগুন ছড়াতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দুই শতাধিক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দগ্ধ দুই শতাধিক ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ও অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৫২ জন এবং অর্থোপেডিক বিভাগে ১০ ভর্তি রয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫২ জন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।

তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পোড়া। তাদের বাঁচাতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিএম ডিপো থেকে ৪০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখন যে মরদেহগুলো উদ্ধার হচ্ছে সেগুলো আগুনে পুড়ে বীভৎস রুপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। 

মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার জোনের সহকারী (এসি) কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠাচ্ছে। সেখানে মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। যাদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। 

Link copied!